পেকুয়া প্রতিনিধি :::
পেকুয়ায় বসবাস করেন এমন যে কাউকে যদি জিজ্ঞেস করা হয় পেকুয়ার দু:খ কি? তার উত্তর হবে ‘বানিয়ারছড়া-মগনামা সড়ক’। বর্তমানে এ সড়কের অবস্থা এতই নাজুক হয়ে উঠেছে যে যা চোখে না দেখলে বিশ্বাস করা যাবেনা। কক্সবাজার-১ সংসদীয় আসনের দুই উপজেলা চকরিয়া ও পেকুয়ার মধ্যে যোগাযোগের প্রধান সড়ক হচ্ছে এটি। এছাড়াও পেকুয়ার সাথে চট্টগ্রামসহ সারাদেশের যোগাযোগের জন্য এ সড়কটিই বেশি ব্যবহৃত হয়। চকরিয়ার সাথে যোগাযোগের আরো ২ টি বিকল্প রাস্তা থাকলেও ৮০ ভাগ যাত্রীর চলাচল এ সড়ক দিয়েই। আর এ সড়কটিই এখন মানুষের দুর্ভোগ দুর্দশার অপর নামে পরিণত হয়েছে। স্থানীয় লোকজন ও যাত্রীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, ধারণ ক্ষমতার কয়েকগুণ বেশি ভারী যানবাহন প্রতিনিয়ন চলাচলের কারণে সড়কটি চূর্ণ বিচূর্ণ হয়ে গেছে। বিশেষ করে মগনামায় নির্মিতব্য নৌ বাহিনীর সাব মেরিন ঘাঁটি, পানি উন্নয়ন বোর্ডের বেড়িবাঁধ নির্মাণের মালামাল পরিবহন, অতিরিক্ত লবণ পরিবহন, সিমেন্ট পরিবহন ও স্টেশনগুলোতে পানি নিস্কাশনের পর্যাপ্ত ব্যবস্থা না থাকা ও সর্বোপরি এক যুগ ধরে সড়কটি সংস্কার না করার ফলেই সড়কটির এহেন দশা হয়েছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, ওই সড়কের প্রায় শতাধিক পয়েন্টে তৈরি হয়েছে বড় বড় গর্ত। তার উপর বৃষ্টির পানি জমে ক্ষত বিক্ষত হয়ে পড়েছে এ সড়কটি। ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, সড়ক ও জনপদ বিভাগের উদাসীনতার কারণে এ সড়কে জনদুর্ভোগ চরম পর্যায়ে পৌঁছেছে।
তবে সড়ক বিভাগ জানিয়েছেন সড়কটির উন্নয়নের জন্য ইতোমধ্যে প্রায় ১৫ কোটি টাকা বরাদ্দ হয়েছে। খুব শীঘ্রই এ সড়কের উন্নয়নের কাজ শুরু হবে। বর্ষার কারণে সড়ক উন্নয়নের কাজে হাত দিতে দেরী হচ্ছে। বর্ষায় কাজ শুরু করলে জনগণের দু:খ দুর্দশা আরো বৃদ্ধি পাবে।
জানা যায়, চকরিয়া উপজেলা সদর থেকে মগনামা ঘাট পর্যন্ত ২৫ কিমি এসড়কটি পেকুয়া উপজেলার ৭ ইউনিয়ন ও কুতুবদিয়া উপজেলার ৬ ইউনিয়নের অধিবাসীদের যাতায়াতের জন্য অত্যন্ত গুরশুত্বপূর্ণ। এ সড়কে দুই উপজেলার দৈনিক ল াধিক লোকজন চলাচল করে থাকে। গত একযুগেও সড়কটি সংস্কারে কর্তৃপক্ষ হাত দেয়নি বলে জানিয়েছেন ওই সড়ক যাতায়াতকারীরা।
কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, লোকজন সড়কটি ‘চকরিয়া-পেকুয়া সড়ক’ বা বানিয়ারছড়া মগনামা সড়ক হিসেবে চিনলেও সেটি একতা বাজার- মগনামা সড়ক হিসেবে পরিচিত। সড়কটির নাম্বার হচ্ছে ‘জেড-১১২৫’। একতা বাজার থেকে মগনামা পর্যন্ত যার দৈর্ঘ্য ১৯.০৭ কি:মি:। তাকেও আবার দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছে। তন্মধ্যে একতা বাজার থেকে পেকুয়া চৌমুহনী কলেজ গেইট পর্যন্ত ১১.৩ কিমি প্রথম পর্যায় আর চৌমুহনী কলেজ গেইট থেকে মগনামা ঘাট পর্যন্ত ৭.৭ কিমি ২য় পর্যায়। অফিস সূত্র জানায়, সড়কটির বেহাল দশা সম্পর্কে কর্তৃপক্ষ অবগত আছে এবং সড়কটি সংস্কারে প্রয়োজনীয় বরাদ্দও পাওয়া গেছে। বর্ষা শেষে সড়কটির উন্নয়নের কাজে হাত দেয়া হবে বলে জানান তারা।
এ বিষয়ে জানতে চকরিয়া সড়ক ও জনপদ বিভাগের সাব অ্যাসিস্টেন্ট ইঞ্জিনিয়ার আবু আহসান মো. আজিজুল মোস্তফা জানান, একতা বাজার থেকে চৌমুহনী পর্যন্ত ১২ কিমি সড়কটি মাতারবাড়ি কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্পের অধীনে দিয়ে দেয়া হয়েছে। বাকী চৌমুহনী থেকে মগনামা পর্যন্ত ৭.৭ কিমি রাস্তা সড়ক ও জনপদ বিভাগ সংস্কারের উদ্যোগ নিয়েছে। বর্ষা মৌসুম শেষ হলেই সড়কটির কাজ শুরু হবে বলে জানান তিনি। সড়কটির এত নাজুক অবস্থা কেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, জেলা পর্যায়ের সড়কগুলো সাধারণত ১০ টনের বেশি ধারণ মতা থাকেনা। সেখানে পেকুয়া সড়কে প্রতিনিয়তই ৫০ টনের অধিক গাড়ি চলাচল করে থাকে। রাস্তা সংস্কার করার পরও যদি ভারী যানবাহন চলাচল অব্যাহত থাকে তাহলে কোন অবস্থাতেই রাস্তাটি টিকানো যাবেনা। এ বিষয়ে কক্সবাজার সড়ক ও জনপদ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী রানা প্রিয় বডুয়া মুঠোফোনে জানান, চৌমুহনী থেকে মগনামা পর্যন্ত ৭.৩ কিমি সড়ক উন্নয়নের জন্য ‘ঘূর্ণিঝড় রোয়ানোয় তিগ্রস্ত সড়ক উন্নয়ন’ প্রকল্পের আওতায় ১৫ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছে সরকার। তবে এ প্রকল্পের অধীনে ২০ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য কুতুবদিয়া আজম সড়কটিও উন্নয়ন করা হবে। প্রথম বছর এ টাকা খরচ করার পর ২য় পর্যায়ে আরো বরাদ্দ পাওয়া যাবে বলে জানান তিনি। তিনি জানান, এ সংস্কার কাজের আওতায় পেকুয়া বাজার অংশে পানির সঠিক নিষ্কাশণের জন্য দুটি কালভার্ট নির্মাণ, বাজার অংশে ৫০০ মিটার আরসিসি ঢালাই, বাজারের দুই সাইটে রাস্তা প্রশস্ত করা, স্টেশনের পানি নিষ্কাশনের জন্য ইউ ড্রেইন সিস্টেম বাদ দিয়ে ‘সশার ড্রেন’ করে দেয়া হবে।
পাঠকের মতামত: